আমাদের জীবনে রসায়ন (Chemistry in Our Lives)
আমাদের জীবনে রসায়ন।
Visit my Channel
https://www.youtube.com/channel/UC85E4M45JyYsYIad5D3Sw3A?sub_confirmation=1
গৃহস্থালির রসায়ন (Domestic chemistry)
https://youtu.be/9FzShgD5dq4
আমরা আমাদের বাসায় নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করি। যেমন: খাদ্য লবণ, বেকিং
পাউডার, ভিনেগার, কোমল পানীয় ইত্যাদি রাসায়নিক পদার্থ।
খাদ্য লবণ
সাগরের পানিতে অনেক বেশি পরিমাণে খাদ্য লবণ বা সােডিয়াম ক্লোরাইড (Nacl) এবং তার সাথেখুবই সামান্য পরিমাণে Cacl, Mgcl, সহ অন্য কিছু লবণ দ্রবীভূত থাকে। আবার, মাটির তলদেশেখনিজ পদার্থ হিসেবেও সােডিয়াম ব্লোরাইড পাওয়া যায়। আমাদের দেশে সমুদ্রের পানি থেকে খাদলবণ সংগ্রহ করা হয়। সমুদ্র উপকূলের লবণ চাষিরা বিভিন্ন আকৃতির বর্গাকার বা আয়তাকার জমিরচারপাশে বাঁধ নির্মাণ করে খানিকটা খুলে রাখে। জোয়ারের সময় যখন পানি ঐ জায়গায় প্রবেশ করেতখন পানি প্রবেশের মুখ বন্ধ করে জোয়ারের পানি আটকে দেওয়া হয়। যখন ঐ পানি সুর্যেরতাপে শুকিয়ে যায় তখন ঐ জায়গায় লবণ দেখতে পাওয়া যায়। এটাকে সল্ট হারভেস্টিং বলে।সল্ট হারভেস্টিং এর মাধ্যমে পাওয়া এই লবণকে শিল্পকারখানায় বিভিন্ন প্রক্রিয়া সক্পাদন করে খাবারউপযােগী খাদ্য লবণে পরিণত করা হয়।সল্ট হারভেস্টিং এর মাধ্যমে পাওয়া লবণের সাথে বালু মিশ্রিত থাকে। এই লবণকে কোনাে পাত্রে নিয়ে পানি মিশালে লবণ পানিতে দ্রবীভূত হয়েযায় কিন্তু বালু পাত্রের তলায় পড়ে থাকে। তখন লবণ পানির দ্রবণকে ছেঁকে আলাদা করে নেওয়া হয়। এবার এই দ্রবণকে তাপ প্রয়ােগ করলে পানি বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে যায় এবং লবণ পাত্রের তলায় পড়ে থাকে। উৎপন্ন লবণকে প্যাকেটে করে বিক্রির জন্য পাঠানাে হয়। আমাদের শরীরের যাবর্তীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবার জন্য বিভিন্ন আয়ন যেমন: Na", K* ইত্যাদি দরকার হয়। শরীরে যদি কোনাে কারণে Na* এর ঘাটতি হয় তবে NaCl পানির সাথে মিশিয়ে খেলে সেই ঘাটতি পূরণ হয়। Nacl এর ব্যবহার: Nacl অনেক কাজে ব্যবহার করা হয়।
যেমন;(i) ভাত-এর সাথে আমরা তরকারি খাই। তরকারিতে Nacl লবণ না দিলে তরকারি সুম্বাদু হয় না।
(ii) শিল্পকারখানায় NaoH যৌগ প্রসতুত করার জন্য Nacl ব্যবহৃত হয়।
(i) ডায়রিয়া বা পানিশূন্যতা পূরণের জন্য ওষুধ শিল্পে সযালাইনের মধ্যে Nacl প্রয়ােজন হয়।
বেকিং পাউডার
বেকিং সােডা বা খাবার সােডার রাসায়নিক নাম সােডিয়াম হাইড্রোজেন কার্বনেট (NaHCO,)। বেকিং
সােডা (NaHCO;) তৈরি করে তার মধ্যে টারটারিক এসিড (C,H.0.) মিশালে বেকিং পাউডার তৈরি।
হয়। সাধারণত কেক বানানাের কাজে বেকিং পাউডার ব্যবহার করা হয়।
কিং
থে
বেকিং সােডা প্রস্তুতি
মােনিয়া গ্যাস, খাদ্য লবণ, পানি এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে বেকিং সােডা প্রস্তুত করা যায়।
ামে পানির মধ্যে NaCl কে দ্রবীভূত করে Nacl এর সক্পৃন্ত দ্রবণ প্রস্তুত করা হয়। এবার এই
পক দ্রবণের মধ্যে NH, গ্যাস প্রবাহিত করে NH; দ্বারা সক্পুক্ত করা হয়। কার্বন ডাই-অক্সাইড
এাসকে NH; সক্পূক্ত Nacl দ্রবণের মধ্যে প্রবাহিত করা হয়। এক্ষেত্রে Co,, NH,, H;0 একত্র হয়ে
প্রথমে অ্যামােনিয়াম হাইড্রোজেন কার্বনেট (NH.HCO,) উৎপয্ন হয়। এরপর অ্যামােনিয়াম হাইড্রোাজেন
কার্বনেট সােডিয়াম ক্লোরাইড-এর সাথে বিক্রিয়া করে সােডিয়াম হাইড্রোজেন কার্বনেট (NaHCO,) বা
বেকিং সােডা উৎপন্ন করে।
Co2 + NH, + H;0
NH,HCO,
NH,HCO; + NaCl
NaHCO, + NH,cl
বেকিং সােডাকে বিক্রিয়া পাত্র থেকে পৃথক করে তার সাথে টারটারিক এসিড মেশানাে হয়। এ
মিশ্রণকে বেকিং পাউডার বলে।
বেকিং সােডার ব্যবহার: কেক প্রস্তুতির সময় ময়দার মধ্যে বেকিং পাউডার মিশিয়ে তাপ প্রদান করা
ইয়। বেকিং সােডা মিশ্রণের টারটারিক এসিডের (C,H.0,) সাথে বিক্লিয়া করে সােভিয়াম টারটারেট
, Na,0.), Co, গ্যাস এবং H.0 উৎপন্ন করে। এই co; গ্যাস এর জন্য কেক ফুলে উঠ।
C,H,Na;Os + 200, + 2H,0
বাড়তে কিংবা বেকারিতে পাউরুটি ফোলানাের জন্য ইস্ট নামক ছত্রাকও ব্যবহার করা হয়। এ জন্য
খমে চিনির দ্রবণে ইস্ট মেশানাে হয়। এই মিশ্রণ দিয়ে ময়দা মাখিয়ে দলা করে উষ্ণ জায়গায় রেখে
দিলে ইস্টের সবাত শ্বসনের কারণে কার্বন ডাই অক্সাইডের উৎপন্ন হয় যা পাউবুটিকে ফুলতে সাহায্য।
2NaHCO, + C,H¿06
য়। পাউরুটি ফলে ওঠার পর এভেনে বেকিং করা হলে উত্তাপে ইস্ট মারা যায়, তখন পাউরুটির
ফোলা বন্ধ হয়।
পৃথকভাৰে যেকিং পাউডায় এবং ইস্টেয সাথে ময়দা মেখে যেখে লাও। কি সময় পরে এই
ময়দা দিয়ে আলাদা আলাদাতাৰে কে বামা। পুটি কেকের মাঝে তুলশা कরে। কেক দুষটিতে
কোনাে পার্থকয দেখা থায়? এর কায়ণ ব্যাখ্যা করাে।
সিরকা বা ভিনেগার
ইখানয়িক এসিডের এ%-10% জলীয় মবণকে ভিনেগার বলা হয়। তিনেগার তরল পল্থ। সাধ
আচার তৈরি করার সময় ভিনেপার যােগ করা হয়।
ভিনেপারের প্রস্তুতি
25 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে 35 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় রাখা একটি স্টিলের পাত্রে ইথানল
(CH,CH,OH) এবং অ্যাসিটোব্যাকটর নিয়ে এর মধ্যে অক্সিজেন গ্যাসের বুদবুদ প্রবাহিত করলে
ভিনেগার বা অ্যাসিটিক এসিড বা ইথানয়িক এসিড (CH,COOH) প্রস্তুত হয়। আ্যাসিটোব্যাকটর এমন
এক ধরনের এনজাইম নিঃসৃত করে যা ইথানলকে অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করতে সাহাজ্য করে।
CH,CH,OH + 0;
CH,COOH + H,0
খাদ্য সংরক্ষণে ভিনেগারের ভূমিকা
আচারকে যদি ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে তযে আচায় পচে যায় বা নন্ট হয়ে যায়। অচার-এর মে
ভিনেপার দিলে আচারকে ব্যাকটেরিয়া অক্রমণ করতে পায়ে না। ভিনেপারের মূল উপাদান ইখানক
এসি। তিনেগারকে যখন আচারের মধ্যে দেওয়া হয় তখন ইথানয়িক এসি ক্তৃক ত্যাপকৃত প্রেট,
H* ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বসে করে এবং খাদ্ দীর্ঘকাল ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পয়। এতাৰে
তিনেপার দিয়ে খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়।
কোমল পানীয়
ঠাণ্ডা অবস্থায় ও উচ্চ চাপে পানিতে কার্যন ডাই-অক্পই প্যাস সবীতত কয়ে কেনমল পানীয় ভৈরি
করা হয়। কোমল পানীয়তে ফার্বন ডাই অয্পাই এবং পানি বিক্রিয়া কয়ে কারনিক এসি (H,co)
উৎপয্ন করে। খাদ্য ছজম বা পরিপাক হবায জন্য মানুষ কোমল পানীয় পাম করে থাকে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় রসায়ন (chemistry for Cleanliness)
সম্খ দেহের সুস্থ মনকেই স্বাস্থ্য বলা হয়। বাস্থয ভালাে রাখার জন্য আমরা আমাদের শরীরকে
পরিষ্ষার-পরিচ্ছন্ন রাখি। আমাদের শরীর পরিষ্ষার-পরিচ্ছন্ থাকলে মনও ভালাে থাকে। আমাদের
শরীর পরিষ্ষার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আমরা প্রসাধনী সাবান ব্যবহার করি। আমাদের পােশাক বা
কাপড়-চোপড় পরিষ্ষার রাখার জন্য আমরা কাপড় কাচা সােডা, ব্লিচিং পাউডার ইত্যাদি ব্যবহার করি।
ঘরের জানালার কাচ বা অন্যান্য কাচদ্রব্য পরিষ্ষার-পরিচ্ছয়ন করার জন্য আমরা গ্লাস ক্লিনার ব্যবহার
করি। টয়লেট পরিষ্ষার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য টয়লেট ক্লিনার ব্যবহার করি। এসব পরিষ্কার সামগ্রীর
প্রস্তুতি এবং পরিষ্কারকরণের ক্রিয়াকৌশল নিজ্নে আলােচনা করা হলাে:
কাপড় কাচা সােডা
সােডিয়াম কার্বনেট (Na.CO,) কে সােডা অ্যাস বলা হয়। সােডা অ্যাসের । অণুর সাথে 10 অণু পানি
রাসায়নিকভাবে যুক্ত হলে তাকে কাপড় কাচা বা ওয়াশিং সােড়া বলে। কাপড় কাচা সােডার রাসায়নিক
নাম সােডিয়াম কার্বনেট ডেকা হাইড্রেট (Na,CO,10H,0)।
কাপড় কাচা সােডা প্রস্তুতি
গাঢ় NaOH এর দ্রবণের মধ্যে Co, কে অধিক পরিমাণে চালনা করলে সােডিয়াম কার্বনেট উৎপন্ন হয়
যা পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে।
2NAOH + CO,
Na,CO, + H,0
বিক্রিয়া পাত্রের মধ্যে Na,CO, এবং পানি থাকে। সােডিয়াম কার্বনেট 10 অণু পানির সাথে যুক্ত হয়ে
কাপড় কাচা সােডা (Na,CO,.10H,0) উৎপয্ন হয়।
Na,CO,10H,0
Na CO, + 10H;0
কাপড় কাচা সােডার ব্যবহার
কাপড় পরিষ্কার করতে কাপড় কাচা সােড়া ব্যবহার করা হয়।
টয়লেট ক্লিনার
টয়লেট ক্লিনারের মূল উপাদান সােডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaoH)। টয়লেট ফ্রিনারে সােডিয়াম
হাইড্রোক্সাইড এর সাথে সােডিয়াম হাইপােক্লোারাইট (Naocl) মিত্রিত থাকে। বেসিন, কমােড ইতযাদি
পরিষ্কার করার জন্য টয়লেট ক্লিনার ব্যবহার করা হয়। টয়লেট, বেসিন, কমােড ইতযাদিতে চবি
জাতীয় পদার্থ, প্রােটিন জাতীয় পদার্থ, বিভিন্ন রং এর জৈব পদার্থ, অজৈব পদার্থ, রােগজীবাণু ইত্যাদি
থাকে। যখন টয়লেট, বেসিন, কমােড ইত্যাদিতে টয়লেট ক্লিনার যােগ করা হয়, তখন সােডিয়ামহাইড্রোক্সাইড চর্বি জাতীয় পদার্থ, প্রােটিন জাতীয় পদার্থ ইত্যাদির সাথে বিক্রিয়া করে এবং সােডিয়াম
হাইপােক্লোরাইট বিভিন্ন রং এর পদার্থ এবং রােগজীবাণুর সাথে বিক্রিয়া করে এদের কার্যকারিতা নষ্ট
করে দেয়।
টয়লেট ক্লিনার দ্বারা টয়লেট পরিষ্ষারের কৌশল
টয়লেট ক্লিনারকে যখন টয়লেটের উপর ঢালা হয় তখন টয়লেট ক্লিনারের বিভিন্ন উপাদান বিভিন্নবূপে
বিক্রিয়া করে। টয়লেট ক্লিনারের মূল উপাদান NaOH এর ক্ষারধর্মী ধর্মের জন্য টয়লেট পরিষ্কার হয়।
টয়লেট ক্লিনারের সােডিয়াম হাইপােক্লোরাইট (NaOcl) পানির সাথে বিক্রিয়া করে হাইপােক্লোরাস
এসিডে (HOCI) পরিণত হয় যা ভেঙে জায়মান অক্সিজেন উৎপন্ন করে। এই জায়মান অক্সিজেন
রঙিন পদার্থকে বর্ণহীন করে এবং জীবাণুকে ধ্বংস করে।
NaOCI + H20
HOCI
রঙিন পদার্থ + [o]
NaOH + HOCİ
HCl + [0]
বর্ণহীন পদার্থ
জীবাণু + [o]
মৃত জীবাণু
এভাবে টয়লেট ক্লিনার রঙিন পদার্থকে বর্ণহীন করে এবং জীবাণুকে ধ্বংস করে।
(তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে অক্সিজেন পরমাণু দিয়ে জায়মান অক্সিজেনকে বােঝানাে হয়। জায়মান অক্সিজেন - [o])
%3D
%3D
সাবান
সাধারণত সাবান হলাে উচ্চতর ফ্যাটি এসিডের সােডিয়াম লবণ (R-COONa) বা উচ্চতর ফ্যাটি
এসিডের পটাশিয়াম লবণ (R-COOK)। এখানে R কে অ্যালকাইল মূলক বলা হয়। R এর সাধারণ
সংকেত C,H এবং n এর মান 12 থেকে 18 পর্যন্ত। যেমন; সোডিয়াম স্টিয়ারেট সাবানের
সংকেত C),HsCOONa এবং পটাশিয়াম স্টিয়ারেট সাবানের সংকেত CHgCOOK । তেল বা চর্বির
সাথে সােডিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড বিক্রিয়া করে সাবান এবং গ্লিসারিন তৈরি
হয়। সাবান ও গ্লিসারিন তৈরির এই প্রক্রিয়াকে সাবানায়ন বলে। সাবানায়ন প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত সাবান
এবং গ্লিসারিনের মিশ্রণের মধ্যে Nacl যােগ করলে গ্লিসারিন পাত্রের নিচে অবস্থান করে এবং
সাবানের অণুগুলাে Nacl কে ঘিরে একত্র হয়ে পাত্রের উপরের দিকে কেকের আকারে ভেসে উঠে।
একে সােপ কেক বলে। সােপ কেককে ছাঁকনির সাহায্যে ছেঁকে পৃথক করে বিভিন্ন আকৃতির ছাঁচে
ঢেলে বিভিন্ন আকৃতির সাবান তৈরি করা হয়।
সাবান একটি পরিষ্কারক দ্রব্য যা তেল বা চর্বি এবং ক্ষার থেকে প্রস্তুত করা হয়। ব্যবহারের উপর
ভিত্তি করে সাবানকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রসাধনী সাবান এবং লন্ড্রি সাবান:
প্রসাধনী সাবান: আমাদের ত্বককে পরিষ্ষার করার জন্য যেসব সাবান ব্যবহার করি তাদেরকে
প্রসাধনী সাবান বলে।
লন্ড্রি সাবান: কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করার জন্য আমরা যেসব সাবান ব্যবহার করি তাদেরকে কাপ
কাচা সাবান বা লক্জ্রি সাবান বলা হয়।
সাবান তৈরির সময় সাবানের সাথে গ্লিসারিনও তৈরি হয়। সাবান এবং প্লিসারিনের মিের সামে
তেল, চর্বি বা ক্ষার ইত্যাদি থেকে যেতে পারে। এগুলাে থেকে সাবানকে আলানা করা হয়। এই
আলাদা করার সময় যদি সাবানের মধ্যে অধিক তেল বা চর্বি থেকে যায় তখন সাবানের মধ্যে তৈল
ভাব থেকে যায়। এই সাবান ব্যবহারের সময় তেমন কোনাে ফেনা উৎপন্ন করে না। যদি সাবনের
মধ্যে অধিক পরিমাণে ক্ষার থেকে যায় তবে এই সাবান ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি হয়। এজন
সাবান তৈরি কারখানায় সঠিক অনুপাতে তেল বা চর্বি এবং ক্ষার যােগ করতে হয় যাতে তেল বা চবি
এবং ক্ষার সম্পূর্ণরূপে বিক্রিয়া করতে পারে। কার্বক্সিল গ্রুপ অনেক বড় কার্বন শিকলের সাথে ন
থাকলে ঐ যৌগকে উচ্চতর ফ্যাটি এসিড বলে। ফ্যাটি এসিড অ্যালকোহল বা প্লিসারিনের সাথে
বিক্রিয়া করে এস্টার উৎপন্ন করে। উচ্চতর ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারিনের ট্রাই এস্টার তরল অবস্থায়
থাকলে তাকে তেল এবং কঠিন অবস্থায় থাকলে তাকে চর্বি বলা হয়।
স্টিয়ারিক এসিড হলাে প্রাণীদেহের ফ্যাট থেকে প্রাপ্ত সক্পৃত্ত ফ্যাটি এসিড। সম্পূন্ত ফাটি এসিডে
কার্বন-কার্বন একক বন্ধন থাকে। কোনাে দ্বিবন্ধন বা কোনাে ত্রিবন্ধন থাকে না।
পাওয়া যায়। অলিক এসিড হলাে অসম্পৃত্ত ফ্যাটি এসিড। অসম্পৃত্ত ফ্যাটি এসিডে কার্বন-কার্যন
দ্বিবন্ধন বা কার্বন-কার্বন ত্রিবন্ধন থাকে। লন্ড্রি সাবানে ক্ষার বা অন্যান্য অপদ্রব্য তুলনামূলক বেশি
থাকে এবং এতে সুগন্ধি বা জীবাণুনাশক পদার্থ যােগ করা হয় না। প্রসাধনী সাবানে ক্ষার এবং
অন্যান্য অপদ্রব্যের পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে। প্রসাধনী সাবানে সুগন্ধিকারক পদার্থ ব
জীবাণুনাশক পদার্থ যােগ করা হয়।
জলপাই থেকে যে তেল পাওয়া যায় তাকে অলিভ অয়েল বলে। অলিভ অয়েল থেকে অলিক এসিড
হয় এবং তরল আকারেও পাওয়া যায়। লরাইল অ্যালকোহলের (CH 0) সাথে সলফিউরিক এসিড
(H,SO,) বিক্রিয়া করে লরাইল হাইড্রোজেন সালফেট (CH.SO,) এবং পানি উৎপন্ন করে। এই
লরাইল হাইড্রোজেন সালফেট (C)HSO,) এর সাথে সােডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH) বিক্রিয়া
OPPOকS2সাচিয়াম লরাইল সালফেট (CpHsSO,Na) এবং পানি (H,O) উৎপন্ হয়। সােডিয়াম লরাইল।
ডিটারজেন্ট
ডিটারজেন্ট সাবানের মতােই এক প্রকার পরিষ্ষারক দ্রব্য। ডিটারজেন্ট সাধারণত পাউডারের মতা
জেন্ট নামে পরিচিত।
সালফেট (C)HsS
+ CiHSO, + H,0
+ CHSO,Na + H,0
C12H2,0 + H,SO,
C2H, SO, + NaOH
ডিটারজেন্টকে ব্যবহার উপযােগী করার জন্য ডিটারজেন্টের মধ্যে বিভিন্ন পদার্থ যােগ করা হয়।
ডিটারজেন্টকে পাউডার আকৃতির করার জন্য সােডিয়াম সালফেট (Na,SO,) যােগ করা হয়।
সাবান ও ডিটারজেন্ট দ্বারা ময়লা পরিক্ষার করার কৌশল
সাবান ও ডিটারজেন্ট এর মূল কাজ হলাে কাপড়-চোপড় থেকে তেলকে অপসারণ করা এবং পানি
দিয়ে ধুয়ে ধুলাবালিকে অপসারণ করা। আমাদের শরীর থেকে তৈলাক্ত পদার্থ বের হয়ে কাপড়ে লেগে
যায়। এছাড়া বাতাস থেকে কিছু তৈলাক্ত পদার্থ কাপড়ে লেগে যায়। এরপর ধুলাবালি এই তৈলাক্ত
পদার্থের উপর লেগে ময়লা তৈরি
করে।
সাবান
সাবান
(R-COONA)
ও
তেল
ডিটারজেন্ট
(C,H2,S0,Na)
একটি দীর্ঘ কার্বন শিকলবিশিষ্ট
কাপড়
অণু । পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায়
এরা ঋণাত্মক চার্জ বিশিষ্ট সাবান
পনি আকী
পেলার খুণ
(R-CO0) বা ডিটারজেন্ট আয়ন
(C1,H2SO,)
সােডিয়াম আয়নে (Na) ভাগ হয়ে
এবং
ধনাত্মক
যায়।
সাবান
বা ডিটারজেন্ট
আয়নের এক প্রান্তে ঋণাত্মক চা্জ
যুক্ত থাকে। এই প্রান্ত পানিকে
আকর্ষণ করে বলে হাইড্রোফিলিক চিত্র 12.02: সাবান কিংবা ডিটারজেন্ট দিয়ে ময়লা পরিষ্ষার করার
বা পানি আকর্ষী বলে। সাবান বা
কৌশল।
ডিটারজেন্ট আয়নের অন্য প্রান্ত
তেল বা গ্রিজে দ্রবীভূত হয়, এই প্রান্তকে হাইড্রোফোবিক বা পানি বিকর্ষী বলে।
সাবান কিংবা ডিটারজেন্টকে যখন পানির উপস্থিতিতে তেল বা গ্রিজ জাতীয় ময়লাযুক্ত কাপড়ের
সংস্পর্শে আনা হয় তখন তার হাইড্রাফোবিক প্রাম্ত তেল বা গ্রিজের দিকেক আকর্ষিত হয় এবং এতে
দ্রবীভূত হয়। অন্যদিকে হাইড্রোফিলিক অংশ পানির দিকে আকর্ষিত হয় পানির স্তরে প্রসারিত হয়।
এ অবস্থায় কাপড়কে ঘষা দিলে বা মােচড়ানাে হলে তেল বা গ্রিজের ময়লার কণা চারদিক থেকে
সাবান বা ডিটারজেন্টের ঋণাত্মক চার্জ বিশিষ্ট আয়ন দিয়ে আবৃত হয়ে পড়ে এবং তেল বা গ্রিজের
OPPO A52 · ©Chemistry Mart
ग শ
আমাদের জীবনে রসায়ন
ময়লার কণার চারপাশে ঋণা্মক চার্জের একটা বলয় সৃষ্টি হয়। তখন এগুলাে একটি আরেকটি
থেকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ দূরত্বে থাকতে চায় এবং তেল, সাবান এবং পানির সাথে একত্র হয়ে একটি
মিশ্রণ তৈরি করে। এই মিশ্রণ ফেনা নামে পরিচিত। ফেনাতে আরাে পানি যােগ করলে ফেনা
অপসারিত হবার সাথে তেল ও ধুলাবালি কাপড় থেকে অপসারিত হয়। এভাবেই সাবান ময়লা
পরিষ্কার করে।
সাবান ও ডিটারজেন্টের পার্থক্য।
সাবান
ডিটারজেন্ট
1. সাবান হলাে দীর্ঘ কার্বন শিকলবিশিষ্ট ফ্যাটি 1. ডিটারজেন্ট হলাে দীর্ঘ কার্বন শিকলবিশিষ্ট
এসিডের সােডিয়াম বা পটাশিয়াম লবণ।
বেনজিন সালফোনিক এসিডের সােডিয়াম লবণ
2. সাবান খর পানিতে ভালাে কাজ করতে| 2. ডিটারজেন্ট খর পানিতেও ভালাে কাজ করতে
পারে না।
পারে।
3. ডিটারজেন্ট এর চেয়ে পরিষ্কারকরণের 3, সাবানের চেয়ে পরিষ্কারকরণের ক্ষমতা
ক্ষমতা সাবানের কম।
ডিটারজেন্টের বেশি।
অতিরিক্ত সাবান ও ডিটারজেন্ট ব্যবহারের কুফল
সাবানের মধ্যে কিছু পরিমাণ ক্ষার, গ্লিসারিন, তেল, চর্বি ইত্যাদি থেকে যায়। অতিরিক্ত সাবান ব্যবহার
করলে ক্ষার হাতের ক্ষতি করে। আবার পুকুর বা জলাশয়ের ধারে বা নদীর তীরে কাপড় কাচা হলে
সাবানের ফেনা পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের সাথে বিক্লিয়া করে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের
পরিমাণ কমিয়ে দেয়। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে পানির মধ্যে যে সকল জলজ
উদ্ভিদ এবং মাছ রয়েছে সেগুলাে মারা যায়। এভাবেই অতিরিক্ত সাবান ব্যবহারে পানি দূষিত হয়।
আবার ডিটারজেন্টের মধ্যে ট্রাইসােডিয়াম ফসফেট (Na,PO,) থাকে। এই ট্রাইসােডিয়াম ফসফেট
উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য ভালাে সার হিসেবে কাজ করে। এতে পুকুরে উদ্ভিদের পরিমাণ বেড়ে যায়।
উদ্ভিদ তার বেঁচে থাকার জন্য পানির মধ্যে দ্রবীভূত অক্সিজেন খরচ করে ফেলে, ফলে পানিতে
অক্সিজেনের অভাবে মাছ মরে যায়। এভাবেই অতিরিক্ত ডিটারজেন্ট ব্যবহারে পানি দৃষিত হয়।
মানুষ ত্বক পরিষ্কার করতে, ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায়, চুল পরিষ্কার করতে এবং বিভিন্ন কাজে প্রসাধনী
(সাবান, ক্রিম, শ্যাম্পু) ব্যবহার করে। তােমরা আগেই জেনেছাে তৃবকের pH 4.8 থেকে 5.5 এর মধ্যে।
অর্থাৎ ত্বক অল্লীয় প্রকৃতির যা তবকে জীবাণুর আক্রমণ বা বংশবৃদ্ধি প্রতিরােধ করে। কাজেই প্রসাধনীর
pH 4.8 থেকে 5.5 এর বেশি থাকলে সেই প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে তুবকের মাভাবিক অগ্নত্ব কমেব্লিচিং পাউডার
ব্লিচিং পাউডার এর রাসায়নিক নাম ক্যালসিয়াম ক্লোরাে হাইপােক্লোরাইট, Ca(ocl)cl। বলপেন এর
কালি বা অন্য কোনাে রং যেগুলাে সাবান এবং ডিটারজেন্ট দিয়ে তােলা যায় না সেগুলোকে কাপড়
থেকে উঠানাের জন্য তথা বর্ণহীন করার জন্য ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা হয়। এছাড়া মেঝে,
কমােড, বেসিন ইত্যাদি জায়গা থেকে জীবাণু ধ্বংস করার কাজেও ব্লিচিং পাউড়ার ব্যবহার করা হয়।
40°C তাপমাত্রায় কঠিন ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইডের মধ্যে ক্লোরিন গ্যাস চালনা করলে ব্লিচিং
পাউডার, Ca(ocl)cl উৎপন্ন হয়।
Ca(OH), + Cl,
Ca(OCl)Cl + H20
ব্লিচিং পাউডার কাপড়ের রঙিন দাগকে বর্ণহীন করে। এজন্য ব্লিচিং পাউডারকে বিরঞ্জক বলা হয়।
OPPO A52, OChemistry Mart
ব্লিচিং পাউডার দ্বারা কাপড়ের রঙিন দাগ উঠানাের কৌশল
বিচিং পাউডার উভয়ই রাসায়নিক পদার্থ। ব্লিচিং পাউডারকে যখন কোনো কাপড়ের
দাগের উপর রেখে পানি যােগ করা হয় তখন ব্লিচিং পাউডার প্রথমে পানির সাথে বিক্রিয়া করে
ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড (Cacl,) এবং হাইপোক্লোরাস এসিড (HOCI) তৈরি হয়।
Ca(oCl)Cl + H,o
+ Cacl, + HOC1
HOCI ভেঙে গিয়ে HCl ও জায়মান অক্সিজেন [o] তৈরি করে
HOC1
HCl + [0]
রঙিন পদার্থের সাথে জায়মান অক্সিজেনের (o) বিক্রিয়া করে রঙিন পদার্থকে বর্ণইীন করে।
রঙিন পদার্থ + [o]
বর্ণহীন পদার্থ
-
ব্লিচিং পাউডার দ্বারা জীবাণু ধ্বংস করার কৌশল
ঘরের মেঝে, কমােড, বেসিন ইত্যাদি জায়গা থেকে জীবাণু ধ্বংস করার কাজে ক্লিচিং পাউডার ব্যবহার
করা হয়। ব্লিচিং পাউডারকে যখন কোনাে ঘরের মেঝে, কমােড, বেসিন ইত্যাদির উপর রেখে পানি
যােগ করা হয় তখন ব্লিচিং পাউডার প্রথমে পানির সাথে বিক্রিয়া করে ক্যালসিয়াম ক্লারাইড (Cacl)
এবং হাইপােক্লোরাস এসিডে (HOCI) পরিণত হয়।
Ca(OCl)Cl + H,O
Cacl, + HOCI
-
হাইপােক্লোরাস এসিড ভেঙে গিয়ে জায়মান অক্সিজেন [o] তৈরি করে যা জীবাণুকে ধ্বংস করে।
HOCI
+ HCl + [0]
জীবাণু + [o]
+ মৃত জীবাণু
গ্লাস ক্লিনার
গ্লাস পরিষ্ষকার করার জন্য যে পরিষ্কারক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় তাকে গ্লাস ক্লিনার বলে। কাচের গায়ে
যদি তেল, চর্বি বা গ্রিজ লাগে তবে এগুলোর উপর ধুলাবালি পড়ে কাচে ময়লা তৈরি হয়। কাচ
পরিষ্কারকরণে এমন একটি পরিষ্কারক পদার্থ ব্যবহার করতে হবে যা তেল, চর্বি বা গ্রিজের সাথে
বিক্রিয়া করে কিন্তু কাচের উপাদান সােডিয়াম সিলিকেট বা ক্যালসিয়াম সিলিকেট এর সাথে বিক্রিয়া
করে না। সাধারণত অ্যামােনিয়া গ্যাসকে পানিতে দ্রবীভূত করে তৈরিকৃত আমােনিয়াম হাইড্রোক্সাইড
(NH,OH) এর সাথে আইসাে প্রােপাইল অ্যালকোহল, CH,CH(OH)CH; মিশিয়ে গ্লাস ক্লিনার প্রস্তুত
করা হয়। অ্যামােনিয়াম হাইড্রোক্সাইডকে অ্যামােনিয়া দ্রবণ বলেও উল্লেখ করা হয়।
গ্লাস ক্লিনার দ্বারা কাচ পরিষ্কার করার কৌশল
গ্লাস ক্লিনারকে যখন কাচের গায়ে দেওয়া হয় তখন NH.OH কাচের তেল, চর্বি বা গ্রিজের সাথে
বিক্রিয়া করে তেল বা চর্বি বা গ্রিজকে কাচ থেকে অপসারণ করে। যদি কাচের গায়ে কোনাে জেবপদার্থ লেগে থাকে তবে আইসাে-প্রােপাইল অ্যালকোহল সেই জৈব পদার্থকে দ্ৰবীভ়ত করে জৈব
পানার্থকে কাচ থেকে অপসারিত করে। গ্লাস ক্লিনার দিয়ে যখন কাচ পরিষ্কার করা হয় তখন নাকে ও
আখ মাসক পরে নিতে হয়। কারণ গ্লাস ক্লিনারের মধ্যে যে আমােনিয়াম হাইড্রোক্সাইড থাকে সেই
আ্যমােনিয়াম হাইড্রোক্সাইড গ্যাস বের হয়ে নাকে
ও মুখে যেতে পারে।
অ্যামােনিয়া গ্যাসের পরীক্ষাগার প্রস্তুতি
পরীক্ষাগারে
সাধারণত
দুইটি পদ্ধতিতে
অ্যামােনিয়া গ্যাস প্রস্তুত করা হয়।
পরীক্ষাগারে একটি টেস্টটিউবে অ্যামােনিয়াম
ক্লোরাইড (NH,Cl) এবং ক্যালসিয়াম অক্সাইড
(Cao) মিশিয়ে উত্তপ্ত করে অ্যামােনিয়া উৎপন্ন চিত্র 12.04: পরীক্ষাগারে অ্যামােনিয়া গ্যাসের প্রস্তুতি।
করা হয়।
2NH,Cl + Cao
অথবা পরীক্ষাগারে একটি টেস্টটিউবে অ্যামােনিয়াম ক্লোরাইড এবং কলিচুন Ca(OH), মিশিয়ে উত্তণ্ত
করলে অ্যামােনিয়া গ্যাস, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড এবং পানি উৎপন্ন হয়।
2NH, + Cacl, + H;O
2NH,Cl(s) + Ca(OH);
2NH, + Cacl, + 2H;0
শিল্পকারখানায় অ্যামােনিয়া গ্যাস প্রস্তুতি
শিল্পকারখানায় হেবার পদ্ধতিতে অ্যামােনিয়া গ্যাস উৎপাদন করা যায়। হেবার পদ্ধতিতে N; এবং H,
গ্যাস 1:3 অনুপাতে মিশ্রিত করে এর মধ্যে Fe প্রভাবক যােগ করে যদি মিশ্রণকে 450-550°C
তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হয় তবে NH, গ্যাস উৎপন্ন হয়। (1 : 3 অনুপাতে N, ও H; দ্বারা বােঝায় N
যত লিটার নেওয়া হবে তার 3 গুণ H, নেওয়া হবে।) NH; গ্যাস উৎপাদনের সময় কিছু তাপ উৎপন্ন
কিছু NH; গ্যাস ভেঙে N, এবং H, গ্যাসে পরিণত হয়। এই বিক্রিয়ায় উভমুখী তীর চিহ্ন ব্যবহৃত হয়।
Fe
ইয়। এই বিক্রিয়াটি উভমুখী বিক্রিয়া। একদিকে N, এবং H, বিক্রিয়া করে NH, তৈরি হয়, অপরদিকে
2NH, + 92 k)
N2(g) + 3H;(g)
200-250 atm
450°C-550°C
12.3 কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে রসায়ন
(Chemistry in Agriculture and Industries)
শিল্পকারখানায় উৎপন্ন বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ মাটিতে প্রয়ােগ করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করা হয়।
চুনাপাথর (Caco,) একটি মূল্যবান খনিজ সম্পদ। আমাদের দেশে সুনামগঞ্জ জেলায় এবং সেন্টমার্টিন
দ্বীপে প্রচুর চুনাপাথর পাওয়া যায়। চুনাপাথর দ্বারা অনেক পদার্থ তৈরি করা যায়। যেমন: সিমেন্ট
তৈরি করার প্রধান উপাদান হিসেবে চুনাপাথর ব্যবহার করা হয়। কোনাে কারণে মাটি যদি অল্লীয় হয়
অর্থাৎ মাটিতে যদি H এর পরিমাণ বেড়ে যায় তবে মাটির অম্পত্ব কমানোর জন্য সেই মাটিতে
চুনাপাথর প্রয়ােগ করা হলে চুনাপাথর H' এর সাথে বিক্রিয়া করে ক্যালসিয়াম আয়ন (Ca°), কার্বন
ডাই-অক্সাইড এবং পানি তৈরি করে। ফলে মাটির অল্পত্ব কমে যায়।
CaCO, + 2H*
Ca?+ + CO2 + H20
ইউরিয়া (Urea)
ইউরিয়া মূল্যবান পদার্থ। কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং অ্যামােনিয়া গ্যাসের মিশ্রণকে উচ্চ চাপে এবং
130°-150°C তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে প্রথমে অ্যামােনিয়াম কার্বামেট (NH,COONH,) উৎপন্ন হয়।
পরবর্তীতে অ্যামােনিয়াম কার্বামেট ভেঙে ইউরিয়া (NH;-CO-NH;) প্রস্তুত হয়।
Co2 + 2NH,
NH,COONH,
NH;COONH,
+ NH2-CO-NH2 + H20
শিল্পক্ষেত্রে এবং কৃষিক্ষেত্রে ইউরিয়ার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। শিল্পক্ষেত্রে ইউরিয়া থেকে ম্যালামাইন
পলিমার তৈরি করা হয়। কৃষিক্ষেত্রে ইউরিয়াকে সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। জমিতে ইউরিয়া সার
দেওয়া হয় যাতে গাছ ইউরিয়া সার থেকে প্রয়ােজনীয় পুষ্টি উপাদান নাইট্রোজেন গ্রহণ করতে পারে।
উদ্ভিদ সরাসরি N; গ্রহণ করে না। মাটিতে ইউরিয়েজ এনজাইমের উপস্থিতিতে ইউরিয়া পানির সাথে
বিক্রিয়া করে NH,, OH এবং CO, তৈরি করে। উদ্ভিদ এই NH, শােষণ করে।
ইউরিয়েজ এনজাইম
NH,-CO-NH, + 3H;O
2NH,* + 20H¯ + CO2
অ্যামােনিয়াম সালফেট (Ammonium Sulphate)
অ্যামােনিয়া এবং সালফিউরিক এসিড বিক্রিয়া করে অ্যামােনিয়াম সালফেট [(NH,),SO,J এবং পানি
উৎপন্ন হয়।
2NH, + H2SO4
(NH,),SO, + H2O
কৃষিক্ষেত্রে অ্যামােনিয়াম সালফেট এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। অ্যামােনিয়াম সালফেট ক্ষারকের সাথে
বিকিয়া করতে পারে কাজেই মাটিতে ক্ষারকের পরিমাণ বেড়ে গেলে অ্যামােনিয়াম সালফেট প্রয়ােগসবে ক্ষারকের পরিমাণ কমানাে হয়। এটি উদ্ভিদের অতি প্রয়ােজনীয় পু্টি উপাদান। এ থেকে উদ্ভিদ
নাইট্রোজেন ও সালফার গ্রহণ করে।
dos
কৃষিদ্রব্য প্রক্রিয়াকরণে রাসায়নিক দ্রব্য
ফলমূল, শাকসবজি, মাছ ইত্যাদিকে কৃষিদ্রব্য বলা হয়। যে প্রক্রিয়ায় কোনো রাসায়নিক পদার্থের
মাধ্যমে কোনাে কৃষিজাত দ্রব্যকে দীর্ঘদিন ভালাে রাখা বা পচনের হাত থেকে রক্ষা করা হয় সেই
পকিয়াকে কৃষিদ্রব্য প্রক্রিয়াকরণ বলা হয়। রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের ভালাে এবং খারাপ উভয় দিকই
বয়েছে। ব্যবসায়ীরা পাকা আম বাস, ট্রাক বা ট্রেনে করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাবার
সময় আমের গায়ে দাগ লাগে। এই দাগ যুক্ত আম মানুষ কিনতে চায় না। এজন্য অসাধু ব্যবসায়ী
অনেক সময় কাঁচা আম কিনে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যায়, ফলে আমের গায়ে দাগ পড়ে
না। এরপর এই কাঁচা আমের উপর অসাধু ব্যবসায়ী ক্যালসিয়াম কার্বাইডের জলীয় দ্রবণ ব্যবহার করে
ফলে আম পেকে যায়। আবার, ক্যালসিয়াম কার্বাইড (Cac,) এর মধ্যে পানি যােগ করে অ্যাসিটিলিন
গ্যাস তৈরি করা হয়।
CaC2 + 2H,0
C,H; + Ca(OH);
এছাড়া এই ইথিলিন গ্যাস দ্বারাও কাঁচা আম পাকানাে হয়। ইথিলিনও আমদের শরীরের উপর বিরূপ
প্রভাব ফেলে। কার্বাইড দিয়ে আম পাকানাে বলতে অ্যাসিটিলিন দ্বারা আম পাকানাের পদ্ধতিকেই
বােঝানাে হয়।
কৃষিদ্রব্য সংরক্ষণে রাসায়নিক দ্রব্য
কৃষিদ্রব্য যাতে দুর্গন্ধ না হয় বা যাতে এগুলােতে পচন না ধরে সেজন্য বরফ, খাদ্য লবণ, ভিনেগার
ইত্যাদি দ্বারা কৃষিদ্রব্য সংরক্ষণ করা হয়। বরফ দ্বারা মাছ সংরক্ষণ করা হয়। টমেটো, কাঁচা আম
ইত্যাদি কৌটাতে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার জন্য ভিনেগার ব্যবহৃত হয়। খাদ্যের সাথে আমাদের শরীরে
না। কারণ ফরমালিন মানুষ এবং প্রাণী সকলের জন্য বিষান্ত পদার্থ। আমাদের শরীরে ফরমালিন
প্রবেশ করে আমাদের মৃত্যুর কারণও হতে পারে। অতএব, ফরমালিন দ্বারা কৃষিপণ্য সংরক্ষণ করা
উচিত না।
ভিনেগার প্রবেশ করলেও আমাদের কোনাে সমস্যা হয় না। ফরমালিন দ্বারা খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়
কয়েকটি অনুমােদিত ফুড প্রিজারভেটিভ
যেসব রাসায়নিক দ্রব্য খাদ্যসামগ্রীতে দিলে খাদ্যসামগ্রীতে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে না, দুর্গন্ধ হয়।
না, পচন হয় না সেসব রাসায়নিক দ্রব্যকে ফুড প্রিজারভেটিভ বলে। যেসব ফুড প্রিজারভেটিভ।
OPPO A52. © Chemistry Mart
আমাদের শরীরে গেলে শরীরের কোনাে ক্ষতি হয় না এবং সেগুলােকে বিশ্বম্বাস্থ্য সংস্থা খাদ্য।
দিয়েছে সেসব ফুড প্রিজারভেটিভকে অনুমােদিত ফুড প্রিজারভেটিভ বলা৩০৪
রসায়ন
হয়। যেসব ফুড প্রিজারভেটিভ আমাদের শরীরে গেলে আমাদের শরীরের ক্ষতি হয় সেগুলােকে
অননুমােদিত ফুড প্রিজারভেটিভ বলা হয়। সােডিয়াম বেনজোয়েট, বেনজোয়িক এসিড, ভিনেগার
লবণের দ্রবণ, চিনির দ্রবণ ইত্যাদি অনুমাদিত ফুড প্রিজারভেটিভ। ইথিলিন, আসিটিলিন ইত্যাদি
অননুমােদিত ফুড প্রিজারভেটিভ।
শিল্প বর্জ্য ও পরিবেশ দূষণ
শিল্পকারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থ পরিবেশকে দৃষিত করে। বাংলাদেশে চামড়া শিল্প, রং শিল্প,
কীটনাশক শিল্প থেকে বর্জ্য হিসেবে বিভিন্ন প্রকার ভারী ধাতু যেমন: ক্রোমিয়াম (Cr), লেড (Pb),
মার্কারি (Hg) এবং ক্যাডমিয়াম (Cd) ইত্যাদি নির্গত হয়। এসব ভারী ধাতু বা বর্জ্য পদার্থ মাটি এবং
পানিতে প্রবেশ করে। এসব মাটিতে যেসব উদ্ভিদ জন্মে সেসব উদ্ভিদের মধ্যে এসব ধাতু প্রবেশ
করে। এসব উদ্ভিদের ফলমূল খেলে আমাদের শরীরে এসব ভারী ধাতু প্রবেশ করে আমাদের কিডনি
ও লিভারের ক্ষতি করে এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে। আবার সাবান ও ডিটারজেন্ট কারখানা থেকে
প্রচুর পরিমাণে কস্টিক সােডা (NaOH) মাটি এবং পানিতে নির্গত হয়। পানিতে NaOH গেলে
পানিতে ক্ষারকের মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে পানিতে জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিদ ভালােভাবে বাঁচতে পারে
না।
অনুশীলনী
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
1. অ্যামােনিয়া গ্যাস উৎপাদনে ব্যবহৃত হাইড্রোজেন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত কতাে?
(খ) 1 : 3
(ক) 1 : 2
(গ) 2 : 1
(ঘ) 3 : 1
2. NH; + H,SO, বিক্রিয়াটি-
(i) একটি প্রশমন বিক্রিয়া
(ii) উৎপাদ উদ্ভিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান
(iii) উৎপাদের জলীয় দ্রবণের pH এর মান ? এর চেয়ে বেশি
নিচের কোনটি সঠিক?
(2) ii G ji
(3) i, ii 6 i
(গ) i ও ii
3. কোনটি রঙিন পদার্থকে বর্ণহীন করে?
(ক) Na(OH),
(*) Ca(OCl)C1
(W) CH;COOH
(গ) HCl
জমিতে ইউরিয়া প্রয়ােগ করলে কোন আয়ন উদ্ভিদ দ্বারা পরিশােষিত হয়?
(ক) OH
(*) NH,"
(ঘ) ইউরিয়া
(গ) H
সৃজনশীল প্রশ্ন
1 দশম শ্রেণির ছাত্র শাওন টিউবওয়েলের পানিতে সাবান দিয়ে কাপড় ধুয়ে দেখল সেটি তেমন
পরিষ্কার হয়নি এবং ফেনাও ভালাে হয়নি। তার বন্ধু রিয়াদকে কথাটি জানালে রিয়াদ তাকে
ডিটারজেন্ট ব্যবহার করার পরামর্শ দিল।
(ক) সাবান কী?
(খ) গ্লাস ক্লিনার কী?
(গ) শাওন প্রথমে যে পদার্থ দিয়ে কাপড় পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছিল তার পরিষ্কারক কৌশল
বর্ণনা করাে।
(ঘ) রিয়াদ কাপড় পরিষ্কার করার জন্য শাওনকে যে পরিষ্কারক সামগ্রীর পরামর্শ দিয়েছিল সেটি
কার্যকর হওয়ার কারণ যুক্তিসহ ব্যাখ্যা দাও।
2. ডা. চন্দ্রার গৃহকর্মীর বদহজম হওয়ায় গৃহকর্মী বিশ্রাম নিচ্ছেন। হঠাৎ বাড়ির ফ্রিজটি বিকল হওয়ায়
ডা. চন্দ্রা বাজার থেকে আনা কাঁচা মাছ-মাংস, লবণ, হলুদ, বেকিং পাউডার এবং ভিনেগার নিয়ে
চিন্তায় পড়লেন। ইতােমধ্যে গৃহকর্মী গােপনে বেকিং পাউভার খেয়ে সুস্ধবােধ করলেন। ডা. চভ্দা
ঘটনাটি জেনে, ভবিষ্যতে তাকে এটি খেতে নিষেধ করলেন।
(ক) গ্লাস ক্লিনারের মূল উপাদান কী?
(খ) আমাদের দেশের অ্যামােনিয়া শিল্পে বাতাসের ভূমিকা কোথায়?
(গ) তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে ডা. চন্দ্রা মাছ, মাংস সংরক্ষণের জন্য গৃহকর্মীকে উদ্দীপকের
কোনটিকে ব্যবহার করতে বলবেন? ব্যাখ্যা করাে।
1
(ঘ) উদ্দীপকের গৃহকর্মীর বদহজম থেকে মুক্তি পাওয়ার রসায়ন সমীকরণসমূহ ব্যাখ্যা করাে।
কোন মন্তব্য নেই